দশাবতার ও বিঞ্জান
দশাবতার ও বিঞ্জান
যে ধীর, বিরামহীন পরিবর্তনশীল ঘটনাবলীর মাধ্যমে সরলজীব উন্নততর বৈশিষ্ট্য আয়ত্ত করে গঠনগত ও কার্যগত কর্মদক্ষতা প্রাপ্ত হয় তাকে বিঞ্জানের ভাষায় বিবর্তন বলে । আসলে ,যত দিন যাচ্ছে ;যত সময় যাচ্ছে প্রতি জীব নতুন নতুন কর্মক্ষমতা দেখাচ্ছে । কারন তারা বিবর্তিত হচ্ছে । দেখছেন না , সার্স ভাইরাস বিবর্তিত হয়ে সর্বনাশা করোনা ভাইরাস এর এমন একটা রূপ নিল যা বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে প্রকট হল যার কাছে মানুষ হেরে গেছে ।
বিবর্তন নিয়ে পড়তে গিয়ে আমরা Oparin -Haldane এর Theory of Protobiogenesis থেকে শুরু করে Lamark ,Darwin ,Mayer , ইত্যাদি মনিষীদের সম্পর্কে আলোচনা করেছি । আমরা কি কখনো ভারতীয় মুণি-ঋষিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিবর্তন সম্পর্কে শিক্ষাদান করেছি ! আমি অন্তত করিনি , অন্যদের কথা জানি না ।
ভারতীয় মুণি-ঋষিদের মতে পৃথিবীতে প্রাণের সূচনা জলে ।সেখান থেকে বিবর্তিত হয়ে উভচর , স্থলচর ও মনুষ্যেতর প্রাণী হয়ে আসে মানুষ । হিন্দুদের ১৮ টি পুরাণের অন্যতম “গরুর পুরাণে”এর উল্লেখ করা হয়েছে। আবার মধ্যযুগের কবি জয়দেব বিভিন্ন রূপকের মাধ্যমে এই বিবর্তনের ধারাকে “ দশাবতার স্ত্রোস্ত্র “ দ্বারা উপস্থাপিত করেছেন । এই দশ অবতার হলেন :
• মৎস অবতার – ঈশ্বর মৎস রূপে প্রথম অবতার হন । তারমানে , প্রাণের প্রথম বিকাশ ঘটে জলে –একথা AI Oparin 1923 সালে ও JBS Haldane 1928 সালে বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ তুলে ধরেছেন ।
• কুর্ম অবতার -কুর্ম মানে কচ্ছপ ।এটি দ্বিতীয় অবতার , এর অর্থ দাঁড়ায় যে , জলের মাছ বিবর্তন -এর দ্বারা সরীসৃপ হয়েছে ।
• বরাহ অবতার – এটি একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী ।
• নৃসিংহ অবতার – চতুর্থ অবতার পশু ও মানুষের মাঝামাঝি রূপধারী । দেহ মানুষের দেহের মতো ,মাথা কিন্তু সিংহের মাথার মতো ; অর্থাৎ ,দেখতে মানুষের মতো হলেও আচার আচরণে পশুই থেকে গেছে । সুতরাং, বিবর্তন আবশ্যক ।
• বামন অবতার- পঞ্চম অবতার বামনরূপী ।তিনি আসলে অনুন্নত আদি মানব ,মানে প্রস্থর যুগের মানুষ ;যারা চার মিলিয়ন বছর আগে পূর্ব আফ্রিকায় Australopithecus africanas রূপে এসেছিল এবং সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ।
উপরিউক্ত পাঁচ অবতার কিন্তু সত্যযুগের ।এরপর শুরু ত্রেতাযুগের ।
• পরশুরাম অবতার – নতুন যুগের শুরু নতুন অবতার দিয়ে ।এই কুঠারধারী রাম হলেন ক্ষত্রিয় মানসিকতার বলশালী পুরুষ যিনি বল দিয়ে প্রকৃতির রোষালন থেকে মানব সমাজের রক্ষাকারী ।
• রাম অবতার- ত্রেতাতেই এলেন রামচন্দ্র ; যিনি হলেন মানসিক ভাবে উন্নত Homo sapiens অর্থাৎ উন্নত মানুষ ।
• কৃষ্ণ অবতার -দ্বাপরে কৃষ্ণ রূপে বিষ্ণু এলেন অবতার হয়ে ; উদ্দেশ্য কুরু-পান্ডবের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের মাধ্যমে অধর্মের বিনাশ করে ধর্ম স্থাপন ।
• বুদ্ধ অবতার- কলি যুগের একমাত্র অবতার হলেন মানবতার মূর্ত প্রতীক বিশ্ব শান্তির প্রচারক গৌতম বুদ্ধ ।
• কল্কি অবতার- আবার ধর্মরাজ্য স্থাপনের জন্য বলি যুগে আসবেন কল্কি অবতার ।
সুতরাং, স্পষ্ট করে বোঝা যায় যে বিবর্তন থেমে থাকে নি , বিবর্তন চলছে ও চলবে ।
Comments
Post a Comment