ফাইব্রয়েড ---সমস্যা ও সমাধান
ফাইব্রয়েড নামক জরায়ুর টিউমারের সমস্যার কথা আজকাল প্রায় শোনা যায় । ১৫ বছরের মেয়ে থেকে ৫০ বছরের মহিলাদের যে কেউ এই ধরনের সমস্যার শিকার হতে পারেন ; তবে তার হার ২০% --৪০% । মূলত ৩০ –৪০ বছরের মহিলাদের মধ্যে এর আধিক্য দেখা যায় ; প্রতি ৫ জন মহিলার মধ্যে ১ জন অন্তত এই রোগে আক্রান্ত হন। এটি অনেক সময় বন্ধ্যাত্ব ডেকে আনে ।
লক্ষণ ও উপসর্গ
• মহিলা গর্ভবতী নন কিন্তু পেট বড় হচ্ছে
• ভেজাইনাল রক্তপাত পরিমাণের চেয়ে বেশি
• ১০ / ১৫ দিন পরপর হঠাৎ করে রক্তপাত (৩০% রোগীদের এই সমস্যা )
• মাসিক ধর্মের সময় অত্যধিক ভারী রক্তপাত বা দীর্ঘমেয়াদি রক্তপাত
• পিরিয়ডের সময়ে পেটে অতিরিক্ত ব্যাথা
• পেলভিসে চাপ বা বধিরতা
• রক্তাল্পতা ও কৌষ্ঠকাঠিন্য
• তলপেটে ভারী কোন বস্তু থাকার অনুভূতি
• পিঠে ব্যাথা
• যৌনমিলনের সময় অস্বস্তি বা ব্যাথা
• রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়া
• বারবার পেচ্ছাব করা
• ইউরিনারি ব্লাডারে মূত্র আছে অথচ পেচ্ছাব করতে না পারা
• ইউরিনারি ব্লাডারে ইনফেকশন
• ৩০% ক্ষেত্রে বাচ্চা না হওয়া , ইত্যাদি ।
জরায়ুর প্রাচীরের অন্তর্গঠন
জরায়ুর প্রাচীর তিনটি কলাস্তর নিয়ে গঠিত হয় । যথা
• Endometrium -এটি জরায়ুর অন্ত্ঃ প্রাচীরের সবচেয়ে ভেতরের স্তর যা ল্যামিনা প্রোপিয়া নামক যোগকলাস্তর ও স্তম্ভাকার আবরণী কলাস্তর নিয়ে গঠিত হয়।
• Myometrium – জরায়ুর প্রাচীরের ১.৫ সেমি পুরু এই মধ্য স্তরটি অনেকগুলো অরেখ পেশি নিয়ে গঠিত হয়।
• Perimetrium -এটি জরায়ুর প্রাচীরের সবচেয়ে বাইরের স্তর ।
পরিণত স্ত্রী দেহে জরায়ুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭.৫ সেমি এবং ঊর্ধ্বপ্রান্তের ব্যাস প্রায় ৫সেমি এবং ওজন প্রায় ৩০ –৪০ গ্রাম হয়।
অঙ্গসংস্থানিক ভাবে জরায়ুকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় –
• Fundus -এটি জরায়ুর উপরের দিকের উত্তল প্রশস্ত দিক ।
• Body বা Corpus – এটি জরায়ুর মধ্যবর্তী পেশিবহুল পুরু অঞ্চল ।
• Cervix – এটি জরায়ুর নীচের দিকের ৩-৪ সেমি ও ২ সেমি ব্যাসের গঠন যা vagina তে উন্মুক্ত হয় ।
ফাইব্রয়েড-এর প্রকারভেদ
অবস্থান অনুযায়ী ফাইব্রয়েড চার রকমের হয়—
• ইন্নোমোরাল – এই প্রকারের ফাইব্রয়েড সবচেয়ে সাধারণ ও জরায়ুর দেওয়ালে অবস্থান করে।
• সাবসেরিয়াল – এই গুলো আকারে বড় হয় ও জরায়ুর দেওয়ালের বাইরে থাকে।
• সাবমিউকোসাল -জরায়ুর দেওয়ালের অন্তস্তরের নীচের পেশিতে থাকে।
• সার্ভিকেল- মুখ বা সা্র্ভিক্স অঞ্চলে এই টিউমার গুলি থাকে ।
সনাক্তকরণ :
• আল্ট্রাসনোগ্রাফি
• ট্রান্স-ভেজিনাল স্ক্যান
• হিমোস্কোপি
• ল্যাপ্রোস্কোপি
• বায়োপসি
• MRI
• হিস্টেরোসনোগ্রাফি
• হিস্টেরোসালপিনগোগ্রাফি
• হিস্টেরোস্কোপি , ইত্যাদির মাধ্যমে এদের সনাক্তকরণ হয় ।
সুখের কথা হল যে ফাইব্রয়েড থেকে ক্যানসার হয় না , তবে বন্ধ্যাত্বের মতো অভিশাপ ডেকে আনতে পারে । যদি গর্ভধারণ ও ফাইব্রয়েড একসাথে থাকে তবে টিউমার ছোট হলে শিশুর স্বাভাবিক ভাবেই জন্ম হয় ;আর আকারে বড় হলে সিজার করে সময়ের আগেই বাচ্চার জন্ম হয় । তবে উভয় ক্ষেত্রেই শিশু আকারে ছোট হয় ।কোন কোন সময় গর্ভপাতের মতো বিষয়ও ঘটে ।
রোগের কারণ
আনুমান করা হয় যে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন জনিত সমস্যার কারণে এই প্রকারের ফাইব্রয়েড তৈরী হয় ।তবে জিনগত কারণে ও হতে পারে ।
চিকিৎসা
• কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্ট দ্বারা ঔষধ দিয়ে মেনোপজ পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয় ।
• মেডিক্যাল ম্যানেজমেন্ট – নানা ঔষধ ও হরমোন থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
• সার্জারি – মায়োমেক্টমি বা ফাইব্রয়েডকে কেটে ফেলে দিয়ে ।এটি ল্যাপারোস্কোপি ,হিস্টেরোস্কোপি এবং
• এম্বলাইজেশন দ্বারা ফাইব্রয়েড -এর রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে শুকিয়ে দিয়ে ।
• হিস্টেরেক্টমি সার্জারি দ্বারা ফাইব্রয়েড সহ জরায়ু কেটে বাদ দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করা হয় ।
Comments
Post a Comment